স্বভাব
-সুদীপ ভট্টাচার্য্য
কবিতা ১
যদি বোঝাও তবে বুঝবো –
নীল কমলের স্বচ্ছলতা,
গাঙুড়ের ভেলায় বেহুলার জ্ঞান।।
যদি বোঝাও তবে বুঝবো –
অজ্ঞানী শুধুই শরীরের ক্ষমতায়,
সভ্য কেবলই দাঁড়িপাল্লার মাপ।।
যদি বোঝাও তবে বুঝবো –
শিকারীর শিকারের খোঁজে,
মৃত্যু বরণও প্রেম চন্দনে ঘটে।।
যদি বোঝাও তবে বুঝবো –
ধূর্ত শৃগাল হঠাৎ মাংসাশী নয়,
নায্য বাস্তুতন্ত্রের দখলে অন্বিত।।
২
তোর জন্য একটা ঘর বেঁধেছি –
পুঁটলি বাঁধা নিথর দেহের ঘর,
তারপর একে একে নাড়িভুঁড়ি।
আরও পরে মেকাপের বসে তারকা।।
দিনের শেষে –
নদীর ধারে একলা থাকার ঘর,
তাল পাতাদের শক্ত করে গাঁথা।
সন্ধ্যা শেষে দেখা হবে তারাদের দেশে।।
তারপর একটা –
দু’বেলা পান্তা ভাতের ঘর,
ঘুমের স্বপ্নে লন্ঠনের রোশনাই।
বিষাদের সুরেও সুখের রাজ্যের চেষ্টা ।।
তারপর না হয় –
মধ্যবিত্ত টানাপোড়েনের ঘর,
নিয়ত হেরেও রাজমুকুটের চেষ্টা।
লক্ষ্য কাজের হাজার খানেক হয়।।
অবশেষে –
স্বপ্ন হবে বৃহৎ অট্টালিকা,
সুখের মাঝে দুঃখের কিঞ্চিৎ প্রহরী হয়ে।
অঢেল থেকেও শূন্য খোঁজার দেশে।।
৩
যদি আমি আরেক পা করে বাড়িয়ে চলি,
বাড়িয়ে চলি সমুদ্র পথ,
যেখানে একটা সুর ধরে দিকভ্রান্ত আমি,
সঙ্গে আমার সহস্র পথিক ….
তারা মাইল গুনে চলেছে ক্রমশ।।
যদি সেই পথে হাজির কোনো বাউল কণ্ঠ,
নক্ষত্রের ভিড়ে প্রতিচ্ছবিরা সাম্রাজ্য গড়ে তোলার অপেক্ষায়।।
সেই পথেই চিনেছি বহুবার আমাকে,
দেখেছি বেড়ে ওঠা শামুকের দল,
হঠাৎ হঠাৎ করে বিষ চেয়ে বসে।
তারা কিনা পতনের মুখে পড়ে।।
কোনো সোজা আলোর বিস্তীর্ণ পথ,
যদি আমি এগিয়ে নিয়ে চলি,
যেখানে বেঁকে গেলেই বেচাকেনা,
অন্ধকারের ঘোর।
হাত চেটে খেতে চাই, সহস্র হিংস্র কদর।।
৪
সবসময় বাঁচতে নেই।
কিছু সময় মরতে হয়
আবার কিছু কিছু সময় মারতেও হয়,,
– এ অজ্ঞানী ঈশ্বরকে।
যে ঈশ্বর নিয়ত আমাকে নিয়ে শুধু খেলা করে চলেছে,
একহাত থেকে অন্য হাতে,
মোহের বশীকরণে, মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে।।
যদি উঠতে অক্ষম হয় মাঝেমধ্যেই,
শক্ত করে পাঁচটা আঙ্গুল আঁকড়ে ধরতে হয়,
না পেলে একটা আঙুলই আরও শক্ত করে,
দৃঢ়তার সাথে,,
কিংবা নিজেরটা নিজেই।
তারপরেও সন্ধান না পেলে,
– অস্তিত্বটুকুই অজানা ঈশ্বর।।
তবুও বেঁচে আছে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে হতবুদ্ধি,
বেঁচে আছে স্বপ্নের ভেতরের স্বপ্নেরা,
বদ্ধঘরে জয়ের স্বপ্ন নিয়ে,
বেঁচে আছে কালজয়ী ত্রাস এ শরীরে।
মৃত্যুর অপেক্ষায় নয়, বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামবো বলে।
খোঁজার জন্য, অন্য কোনো অজানা ঈশ্বর।।